08/05/2024
সিকিম নামা 2024
সাদা বরফের পাহাড়, স্নো ফল, ঠান্ডা ইত্যাদি দেখার জন্য স্বল্প খরচে ভ্রমন পিয়াসীদের সিকিমে ভ্রমন করার প্লান থাকে। হুট করেই আমরা ৪ জন সিকিম এবং দার্জিলিং যাওয়ার প্লান করি, যদিও প্রথমে দার্জিলিং এবং পরে সিকিম যাওয়ার কথা ছিল কিন্তু ১৯-০৪-২০২৪ তারিখ সিকিম সরকারের লোকসভা নির্বাচন ছিল তাই আমরা আগে সিকিম ভ্রমন করে পরে দার্জিলিং যাই, প্রথম সিকিম ভ্রমনে বেশ কিছু অভিজ্ঞতা অর্জিত হয়, যা সবার সাথে শেয়ার করছি যেন ট্যুর টা সুন্দর হয়।
১. স্বল্প খরচে গেলে বাই রোড যেতে হবে, ভিসা নেওয়ার ক্ষেত্রে বাই রোডে গেলে চ্যাংরাবান্ধা বা ফুলবাড়িয়া যে কোন একটি অথবা দুটো পোর্টই উল্লেখ করতে পারেন। তবে চ্যাংরাবান্ধা থেকে ফুলবাড়িয়া দিয়ে শিলিগুড়ি যেতে প্রায় তিন ভাগের এক ভাগ সময় লাগে এবং খরচ ও হয় কম। তাই ফুলবাড়িয়াই প্রেফারেবল। তবে আরামে যেতে চাইলে বাই রেল নিউজলপাইগুড়ি (By Rail NJP) পোর্ট এড করলে “মিতালী এক্সপ্রেস” এ ট্রেনে জেতে পারবেন। পোর্ট এড করার জন্য ৩০০ টাকা দিয়ে অনলাইনে ফর্ম ফিলাপ করে পোর্ট এড করা যায়। সাধারণত বাই রোডে গেলে মোটামুটি ঢাকা থেকে গ্যাংটক পর্যন্ত ২০ ঘন্টার মত জার্নী হয়, যেটা অনেক সময় কস্টকর হয়। সেক্ষেত্রে ট্রেনে আরাম, কারণ শিলিগুড়ি পর্যন্ত টেনে যাওয়া যায় এরপরে শেয়ারড জীপ, ট্যাক্সি, বাস তে করে গ্যাংটক যাওয়া যায় ৩-৬ ঘন্টা সময় লাগে।
২. সিকিম ভারতের অংশ হলেও স্বাধীন অঙ্গরাজ্য। যেকোন বিদেশিকে এখানে পারমিশন নিয়ে প্রবেশ এবং ত্যাগ করা বাধ্যতামুলক । সিকিমে ট্যুরের জন্য কমপক্ষে ২জন অথবা ততোধিক ট্যুরিস্ট যেতে হবে, একাকি সিকিমে পার্মিশন দেয় না। ভারতীয় নাগরিকের জন্য কোন পারমিশনের প্রয়োজন হয় না। যমুনা ফিউচার পার্কের ইন্ডিয়ান হাই কমিশনের থেকে সিকিম যাওয়ার পার্মিশন নেয়ার প্রয়োজন নেই। সরাসরি সিকিমে ঢুকবার পথে Rangpo চেকপোষ্টে ইনার লাইন পারমিট (ILP) নিতে পারবেন। আবার মেল্লী, দক্ষিন সিকিমেও পারমিশন নেয়া যায়। এছাড়াও শিলিগুড়ি এস এন টি বাস টার্মিনাল থেকেও পারমিশন নেয়া যায় তবে, অবশ্যই র্যাংপ চেক পোস্টে এসে পাসপোর্টে এন্ট্রি অথবা এক্সিট সীল নিতে হবে। প্লেনে আসলে নিউ দিল্লি, কোলকাতা, থেকেও পারমিশন নেয়া যায়, এজন্য আপনার বাড়তি কোন টাকা বা সময় নষ্ট হবে না। কেবল পার্মিশনের জন্য প্রয়োজন হবে ২ কপি ছবি, পাসপোর্ট ও ভিসার ২ টি করে ফটোকপি। ২০ মিনিটের মধ্যে আপনি ইনার লাইন পার্মিট পেয়ে যাবেন। যেটি খুব যত্ন সহকারে আপনাকে পুরো ভ্রমন সময়ে সাথে সাথে রাখতে হবে। আর ফিরে আসার সময় অবশ্যই Rangpo চেকপোষ্টে পারমিশন পেপার টা জমা দিয়ে পাসপোর্টে এক্সিট সীল নিতে হবে যে আপনি সিকিম ত্যাগ করছেন। না হলে তাদের রেকর্ডে আপনি ব্লাক লিষ্টেড হয়ে থাকতে পারেন, এবং আপনি অন্যান্য বাংলাদেশী ট্যুরিষ্ট দের সম্পর্কে একটি খারাপ অভিব্যাক্তি রেখে আসতে পারেন।
Rangpo ফরেনার ইনফরমেশন সেন্টারের ফোন নম্বর হলোঃ +৯১ ৩৫৯২ ২০৯ ০৯০
খোলা থাকে সকাল ৮ টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত। তবে সন্ধ্যা ৭ টার ভেতরে পৌঁছে যাওয়াটা রিস্ক-ফ্রি।
Tourist bringing in Diplomatic/ Official passport must SEEK A SPECIAL PERMIT BY/ FROM M.H.A or M.E.A
একটি জরুরী বিষয়ঃ ইনার লাইন পার্মিট শুধুমাত্র গ্যাংটকে প্রবেশের পার্মিশন, কিন্তু আপনি যদি গ্যাংটকের বাইরের ইস্ট সিকিম এবং নর্থ সিকিম ট্যুরিষ্ট স্পট গুলো তে যেতে চান তাহলে আপনাকে প্রতিটি জায়গায় যাওয়ার জন্য প্রতিটি ডকূমেন্ট এর কমপক্ষে ১টি সেট ট্যুরিষ্ট অফিসে জমা দিতে হবে। এবং এ কাজটি আপনি একা করতে পারবেন না। এজন্য আপনাকে অবশ্যই সিকিম সরকার ট্যুরিজম অনুমোদিত কোন ট্যুর অপারেটর এর সাহায্য নিতে হবে এবং অবশ্যই একজন গাইড নিতে হবে, বিদেশিদের জন্য গাইড বাধ্যতামুলক। আর প্রতিটি স্পটে পার্মিশনের জন্য আপনাকে আগের দিন ট্যুরিষ্ট অফিসে ডকুমেন্ট গুলো জমা দিয়ে পারমিশন পেপারস নিতে হবে। আগের দিন জমা দিলে আপনি পরের দিন পার্মিশন পাবেন। আর পার্মিশন পাওয়ার জন্য আপনি যে গাড়িতে করে যাচ্ছেন সেই গাড়ির নম্বর ও ড্রাইভারের বৃত্যান্ত থাকবে, যে কাজটি ট্যুর অপারেটর করে দেবে।
৩. আপনার কিছু ডকুমেন্ট কমপক্ষে ১০ কপি করে সাথে রাখুনঃ এগুলো হলো পাসপোর্ট সাইজের ছবি ১০ কপি, পাসপোর্ট ও ভিসার ১০ টি করে ফটোকপি। এগূলো বাংলাদেশ থেকে নিয়ে যাবেন, নতুবা সিকিমে প্রতি কপির জন্য আপনাকে প্রায় তিন গুন পয়সা গুনতে হবে, এবং দেখা যাবে কাজের সময় জেরোক্স এর দোকান খুজে পাওয়া যাবে না। প্রতি হোটেলে বুকিং এর জন্য কপি লাগবে, ইস্ট সিকিম কিংবা নর্থ সিকিম ভ্রমনেও লাগবে কপি এবং আলাদা পারমিশন। তবে সাউথ সিকিমে ঘোরার জন্য আলাদা পারমিশন লাগে না আমাদের ড্রাইভার বলেছিল। ইনার লাইন পার্মিট গ্যাংটকে গিয়ে কয়েক কপি করিয়ে নিতে পারেন, তবে ওরাই এটা কপি করে নিবে, আমাদের কপি করা লাগে নাই।।
৪. সিকিম ট্যুরের ক্ষেত্রে গ্রুপে যাওয়া ভালো, এতে গাড়ি ভাড়া ও অন্যান্য খরচ কম পড়বে। গ্রুপের সাইজ ৪ থেকে সর্বোচ্চ ৮ জন হলে ভালো হয়।তবে ৫-৬ জনের গ্রুপ হলে আরামছে যাওয়া যায়। ৪ জন হলে টয়োটা ইনোভা টাইপ গাড়িতে ভ্রমন করতে পারবেন আর ৮ জন হলে টাটা সুমো বা বলেরো এসইউভি তে ভ্রমন করতে পারবেন। এতে করে খরচ কম হবে। তবে যেহেতু পাহাড়ি পথ, তাই ছোট গাড়ি অপেক্ষা টাটা সুমো বা বলেরো এসইউভি তে ভ্রমন করা অনেক নিরাপদ। সিকিম পাহাড় ধস একটা নিয়মিত ঘটনা, তাই যেকোন দিন যেকোন রাস্তা বন্ধ থাকতে পারে, যেমন আমাদের সময় সিলিগুড়ি থেকে গ্যান্টক যাওয়ার রাস্তা বন্ধ ছিল, তাই আমাদের কে ঘুরে যেতে হইছে এই জন্য টাকা এবং সময় ২টাই বেশি লাগছে। নরমালি শিলিগুড়ি থেকে গ্যাংটক যেতে ৩ ঘন্তার মত লাগে। আবার লাচেন এখন বন্ধ এই পাহাড় ধসের জন্য, আমরা পারমিশন পাইনি। লাচুং যাওয়ার রাস্তায় অনেক জায়গায় পাহাড় ধস হয়ে রাস্তা ভাংগাচুড়া যেটা এখন ঠিক করতেছে।
৫. হোটেল বুকিং এর ক্ষেত্রে আজকাল বিভিন্ন অনলাইন সাইটে গিয়ে বুকিং দেয়া যায়, আমরা বুকিং ডট কম থেকে গ্যান্টকের জন্য বুক করেছিলাম। যেটা এমজি মার্গ থেকে একটু দূরে। আপনি চাইলে গিয়ে সরাসরি হোটেল বুক করতে পারেন, তবে বাচ্চা থাকলে আগে ভাগে বুক করে গেলে পরে হ্যাসেল কম হয়। জায়গায় পৌঁছে একটু সময় নিয়ে নিজে দামাদামি করে হোটেল নিজ চোখে দেখে নিয়ে নেয়াটাই ভালো।আমাদের রুম ভাড়া পরছিল ১৫০০ রুপি করে। একটা বিষয় হচ্ছে আপনি সিকিম কিংবা দার্জিলিং এ নরমাল হোটেল থেকে হোম স্টে তে থাকলে খরচ একটু কম হয়, পরিবেশ টা হোমলি পরিবেশ পাওয়া যায় এবং খাবার গুলাও মজা হয়।
৬. ডলার কিংবা টাকা চেঞ্জ করলে বর্ডারেই করবেন। এখানে অনেক এজেন্ট আছে, একটু ঘুরাঘুরি করলে ভালো প্রাইজ পাবেন। শিলিগুড়ি বা গ্যান্টকে রেট ভাল পাবেন না। সাধারনত বর্ডারে ডলার জিজ্ঞাসা করতে পারে, আপনার পাসপোর্টে এন্ডরস পরিমান ডলার থাকলে কোণ সমস্যা নাই। রুপি অল্প সল্প নিতে পারেন, বেশি নিলে ঝামেলা করতে পারে। টাকা আপনার প্রয়োজন মত রাখতে পারবেন। সাধারনত এই বর্ডারে পরিবহন এর লোকজনই এজেন্ট এর কাজ করে, তাই ওরা আসে পাসে থাকলে অফিসাররা কিছু জিজ্ঞাসা করে না।
৭। ট্রাভেল ট্যাক্সঃ সাধারনত বাইরোড কিংবা ট্রেনে , জলপথে বর্ডার ক্রস করলে ট্রাভেল ট্যাক্স দিতে হয়। ৫ বছরের নীচে ট্যাক্স লাগে না। এর উপরে ট্যাক্স লাগে। আপনি চাইলে ঢাকা থেকে ট্যাক্স দিতে পারবেন। এবং এটাই সহজ। বর্ডারেও দেয়া যায়, সে জন্য আপনাকে ব্যাংক খোলার জন্য অপেক্ষা করতে হবে অথবা দালালের হেল্প নিতে হবে। চ্যাংড়াবান্ধা কিংবা ফুলবাড়িয়ার ট্রাভেল ট্যাক্স অনলাইনে দেয়া যায় না। সোনালি, অগ্রনী ব্যাংকের মধ্যামে দিবেন। তবে অবশ্যই যেন ব্যাংক কর্মকর্তার সীল এবং সাইন থাকে। ৫-১২ বছরের ট্যাক্স ৫০০ টাকা এবং ১২ বছরের উপরে ট্যাক্স ১০০০ টাকা এবং এই ট্যাক্সের কোন মেয়াদ নাই, টাকার পরিমান চেঞ্জ না হওয়া পরজনত ব্যবহার করা যাবে।
৮. কিছু প্রয়োজনীয় মেডিসিন সাথে রাখবেন, যেমন (গ্যাস্ট্রিকের অসুধ, ওরস্যালাইন, ব্যথার জন্য নাপা/ ন্যাপ্রসিন, ফ্লাজিল, মোশন সিকনেস এর জন্য এক্লিজ প্লাস, তবে অবশ্যই রেজিস্ট্রার্ড ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে মেডিসিন ব্যবহার করবেন। ১২০০০ ফু্টের উপরে উঠবেন এবং পাহাড়ি আকাবাকা রোডে অনেকেরই মাথা ঘুরানো, বমি ভাব হতে পারে। তাই আগে ভাগেই কেয়ার নেয়া জরুরি।
৯। বাচ্চার জন্যঃ সিকিম ই যদি বাচ্চার জীবনে প্রথম বড় ট্যুর হয় তবে না যাওয়া ই ভালো। আমার বাচ্চা চট্টগ্রাম, কুয়াকাটা, বরিশাল কয়েকবার ঘুরেছে এবং ঢাকায় আর আশেপাশে টুকটাক ঘুরেছে। শরীরে বাহিরের পরিবেশের সাথে তার একটা এডজাস্টমেন্ট করে নিতে হবে আগেই। আরো কিছু বিষয় মাথায় রাখতে হবে,
১) মা কতটুকু স্ট্রং! মা প্রত্যেক মুহূর্তে স্ট্রং না থাকলে বাচ্চা অসুস্থ হয়ে পরবে,
২) প্রতিদিন প্রাইভেট কারে, পাহাড়ি ঘুরপাক রাস্তায় যাত্রা করার মত মানসিকতা থাকতে হবে।হোটেলের চেয়ে যেহেতু গাড়িতেই সময় বেশি যায় তাই সুমো বা বলেরো এই টাইপের গাড়ি নিলে মা এবং বাচ্চার জন্য সুবিধা ব্রেস্টফিডিং এ।শেয়ার গাড়ি হলে এই গাড়ি গুলো তে ৮-১০ জন বসাবে আর নিজেরা প্রাইভেট ডিমান্ড করে নিলে টুর এজেন্সি হয়তো খরচ একটু বেশি নিবে।
৩) প্রতিদিন গাড়িতে উঠার আগে মা এবং বাচ্চা বমির/ মোশন সিকনেসের ঔষধ খেয়ে নিতে হবে।
৪) সকালে হোটেলে থাকতেই বাচ্চার ব্রেকফাস্ট করে বের হতে হবে। সারাদিনে কি খাবে বাচ্চা সেটাও চিন্তা করে রাখতে হবে, সাথে শুকনা খাবার বাচ্চা যা খেতে পছন্দ করে সেটা খাবে। বাহিরের জুস না দেয়াই ভালো।
৫) সাংগু লেক, জিরো পয়েন্টে অক্সিজেনের ঘাটতি হতে পারে, তাই আগে থেকেই কর্পুরের ঘ্রান নিতে হবে, অক্সিজেন ১-২ বোতল (গ্যান্টকে কিনতে পাওয়া যায়, ৬৫০ রুপি করে নিয়েছিল, ৫-৬ পাফ দিলেই শেষ ) নিতে হবে, যা অল্প অল্প পাম্প করে সাপোর্ট নিতে হবে।
ট্যুর অপারেটরঃ আপনারা যে হোটেল এ থাকবেন সে হোটেল থেকেই ট্যুর প্যাকেজ নিতে পারেন। অথবা আপনি চাইলে বাইরের ট্যুর অপারেটরের থেকেও ট্যুর এরেঞ্জ করিয়ে নিতে পারেন। আমরা ফেসবুক গ্রুপ থেকে এক ভাইয়ের মাধ্যমে গ্যান্টকের একজন ট্যুর এজেন্ট পেয়েছিলাম এবং বাংলাদেশ থেকেই তার সাথে কথা বলে সব কিছু এরেঞ্জ করে নিয়েছিলাম। হোটেলে ট্যুর প্যকেজ নিয়ে আলাপ হয়নি কারো সাথে। উনি অনেক কম খরচে আমাদের ট্যুর এরেঞ্জ করে দিয়েছে। ওর নাম মিলান তামাং। ফোন নম্বর হলোঃ +৯১ ৯৬০৯৮ ৭৯৪২০। আপনি হোয়াটসএপ এ ওর সাথে আগে থেকেই যোগাযোগ করে নিতে পারবেন। ওর হাতে ট্যুরের দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়ার কিছু সুবিধা ও অসুবিধা আছে। সুবিধা হলো সে জান-প্রান দিয়ে আপনার ট্যুর এরেঞ্জ করার জন্য যা যা দরকার তা করে দিবে এবং সেটি অন্য যে কোন ট্যুর অপারেটরের থেকে কম খরচে। আর অসুবিধা হলো- ওর কোন অফিস নেই আর ও খুব অগোছালো। তাই প্রতিটি ডকুমেন্ট তাকে দেয়ার ক্ষেত্রে সুন্দর করে গুছিয়ে দিতে হবে। আর ও ইংলিশ খুব একটা বোঝে না, বাংলা হালকা হালকা বোঝে আর হিন্দি খুব ভালো বোঝে।
ইন্ডিয়ান সিম-কার্ডঃ সিকিমে ফরেনার দের কাছে সিম বিক্রি করার পার্মিশন নেই এই কথা টা ঠিক না, আমরা গ্যান্টক থেকে ভোডাফোন এর সিম নিয়েছিলাম। তবে বর্ডার পার হয়েই অথবা শিলিগুড়ি থেকেই সিম কিনে একটিভ করে নিলে ভাল, এক্টিভ করতে ১ ঘন্টার মত সময় লাগে।। সিম কিনতে এক কপি ছবি ও পাসপোর্ট-ভিসার ফটোকপি লাগবে। সিম না কিনে সিকিমে গেলে যোগাযোগ এর ক্ষেত্রে অনেক বেশি ভোগান্তি পোহাতে হবে। সিকিমে ভালো নেটওয়ার্ক পায় “এয়ারটেল অথবা জিও” ফোন।ভোডাফোনের নেটোয়ার্ক খুব খারাপ।
ভ্রমনের শ্রেষ্ঠ সময়ঃ সিকিম ভ্রমনের সবচেয়ে ভালো সময় হলো মার্চ-এপ্রিল। এ সময়ে আপনি পাহাড়ের চূড়ায় বরফ দেখতে পারবেন এবং সবুজ প্রকৃতি ও সচল ঝর্না দেখতে পারবেন তবে যারা ফ্রেশ বরফ দেখতে চান তারা যেতে পারেন নভেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহের ভেতরে। তবে এ সময় প্রচন্ড শীত থাকে, ফলে আপনাকে প্রচুর পরিমানে শীতের কাপড় পড়তে হবে। বেশ কিছু জায়গায় তাপমাত্রা থাকে মাইনাস ৬ এর নিচে।
কাপড়ঃ মোটা জ্যাকেট, ফুলহাতা টিশার্ট, পাতলা সোয়েটার, মোটা মোজা, কেডস, কানঢাকা টুপি, হাতমোজা, থার্মাল ইনার জরুরী। ।আমরা গিয়েছিলেম এপ্রিলে, এই সময়ে ঐখানে স্নো ফল হয় না। এবং তাপমাত্রা একটু বেশি থাকে। আমরা অনেক শীতের কাপড় নিয়েছিলাম, কিন্তু সব কাজে লাগাতে পারিনি। নভেম্বরের দিকে যেহেতু স্নো ফল হতে পারে, তাই সবাইকে কয়েক লেয়ার এ কাপড় পড়তে হয়।
মোটা জ্যাকেট কোথায় কিনতে পাওয়া যায় এই ধারনা পাচ্ছিলাম না, পরে দেখলাম বংগ মার্কেটের এনেস্ককো টাওয়ার এর ৫ম তলায় একটা ফ্লোরেই আছে এই মাইনাস টেম্পারেচারের জ্যাকেট বিক্রি করে, আমরা সেখান গিয়ে “সালমা গার্মেন্টস” থেকে কিনেছিলাম। তবে শীতের সিজনে এস্টেরিওন, আর্টিসান এও পাবেন কিন্তু দাম পরবে অনেক।
আমাদের ভ্রমন বিস্তারিত
প্রথমেই বলে নেই, আমরা নিজেদের মত ট্যুর প্লান করেছি, রিলাক্স এর জন্য, যার জন্য আমাদের খরচ একটু বেশি হয়েছে, এবং ঐ সময় সিকিমে ইলেকশনের জন্য গাড়ি স্বল্পতার জন্যও খরচ বেশি হয়েছে। তারপরেও অনেকের কাজে লাগতে পারে।
আমাদের ট্যুর মেম্বার ছিল ৩ জন নারী, ১ জন পুরুষ এবং ১ জন দেড় বছরের বাবু।
আমাদের ভ্রমন ছিল ঈদের ছুটিতে ১৪ এপ্রিল থেকে ২১ এপ্রিল ২০২৪ পর্যন্ত।
১৩-০৪-২০২০৪ঃ ১০ দিন আগে থেকে বুড়িমারি এক্সপ্রেস বাসের স্লীপার এর টিকেট কেটে রেখেছিলাম। ভাড়া পড়েছিল জনপ্রতি ৩০০০ টাকা। রাত ৯টাই আমাদের বাস ছাড়ে। বুড়িমারি পৌছাই সকাল ৭টায়। মাঝ পথে শেরপুরে ফুড ভিলেজে ১ ঘন্টার মত যাত্রা বিরতি ছিল। বুড়িমারি বাস স্ট্যান্ডেই ওদের ফ্রেস হবার ব্যবস্তা আছে। এবং সকালের নাস্তা করি বুড়ির হোটেলে। আমাদের ট্রাভেল ট্যাক্স দেয়াই ছিল, যেহেতু ঈদের সময় অনেক ভীড় প্লাস সাথে বাচ্চা ছিল তাই নিজেরা ইমিগ্রেশন করিনি, বুড়িমারী এক্সপ্রেস এর সাহায্য নিয়েছিলাম। এর জন্য ঐদিন উনারা জন প্রতি ৪০০ টাকা নিয়েছিল। (পোর্ট ফি ৪৭.১৩ টাকা বাকিটা স্পীড মানি) একটা জিনিস আমি লক্ষ্য করলাম, ট্যাভেল ট্যাক্স এর রিসিট পরিবহনের লোকরাই কাউন্টারে বসে কাটছে। যেটা ব্যাংকে থাকার কথা। এই টাকা কি সরকার পায়?
১৪-০৪-২০২৪ সকাল ৮ টায় বর্ডার খুলে, অনেক মানূষ ছিল, আমরা ইমিগ্রেশন করি বুড়িমারি এক্সপ্রেস এর মাধ্যমে, পাসপর্ট পেয়ে যাই ৯তার দিকে, এরপরে বিজিবি চেকপোস্ট পার করি, এখানে পাসপর্ট এন্ট্রি করে বাংলদেশ কাস্টমস এ লাইনে দারাই। এখানে আমাদের প্রায় ২ ঘন্টা লাগে। বুড়িমারীর ওরাই হেল্প করে, আমরা এখানে চেক করে, ট্রাভেল ট্যাক্স (আমাদের ট্রাভেল ট্যাক্স ঢাকা থেকে অগ্রনী ব্যাংকের মাধ্যমে পে করাছিল কিন্তু কম্পিউটার জেনারেটেড রিসিট এবং ণো সিগ্নেচার রিকোয়ার্ড লেখা থাকার পরেও কেন সাইন নাই এটা নিয়ে ভেজাল করতে চাইছিল, পরে আমি তাদের বুঝালাম যে একি যায়গায় ২ নিয়ম হয় কিভাবে, এতা ভুয়া প্রমান করেন, তারপর মেনে নিল।) এবং পোর্ট ট্যাক্স এর রিসিট জমা দিয়ে ইন্ডিয়ান কাস্টমস এর জন্য লাইনে দাড়াই।
ইন্ডিয়ান কাস্টমস এ বডি চেকাপ করে যেটা বাংলদেশ পাশে দেখলাম না। এবং ব্যাগ খুলেও চেক করে। কাস্টমস, বিএসএফ চেকাপ শেষে এপারে আবার বুরিমারির এজেন্ট আমাদের নিয়ে গেলে তাদের কাউন্টারে। এরা ২০০ টাকা করে নেয়, ইমিগ্রেশনের জন্য, কিন্তু ফর্ম ফিলাপ করে আপনাকে ইমিগ্রেশনে দাড়াতেই হবে। এটা আমরা বুঝতে পারিনি। এই প্রসেস টা নিজেরাই করতে পারতাম। তাহলে টাকা লাগত না। আমাদের ইমিগ্রেশন শেষ হতে হতে ২.০০ বেজে যায়। (ঈদের কারনে এত ভীড় ছিল, নরমালী এত সময় লাগে না)।
ইমিগ্রেশন শেষ করে আমরা এ্কটা ওয়াগন আর গাড়ি ভাড়া করি শিলিগুড়ি পরজনত ২০০০ রুপি দিয়ে। এর মধ্যে আমরা বর্ডার থেকেই ডলার চেঞ্জ করে নি (১ ডলার=৮৬.৬০ রুপি) এবং কিছু খাবার কিনে গাড়িতে উঠে পরি। চাইলে আপনি এখান থেকে ইন্ডিয়ান সিম কিনতে পারবেন অথবা শিলগুড়ি যাওয়ার পথে ড্রাইভার কে বলে কিনতে পারবেন।
যেহেতু আমরা গ্যান্টক যাব, তাই আমাদের তাড়া ছিল দেখে, আমাদের এই ড্রাইভারই যেতে যেতে শিলিগুড়ি থেকে গ্যাংটকের গাড়ি ঠিক করে দিয়েছিল, তখন নরমাল রোড (এন এইচ ১০ হাইওয়ে) বন্ধ থাকায় আমাদের কালিংপং থেকে ঘুরে যেতে হয় সময় লাগে ৬ ঘন্টা এবং টাকা বেশি লাগে। উনি গাড়ি ভাড়া করেছিল ট্যুর অপারেটর থেকে, তাই ভাড়া একটু বেশি মনে হয়েছে। ভাড়া ছিল ৫৫০০ রুপি। তবে শিলিগুড়ি থেকে গ্যান্টকের ড্রাইভার ছিল অসাধারন। যেমন তার ড্রাইভ এবং ব্যবহার আপনাকে মুগ্ধ করবেই। উনার নাম উমেশ (নাম্বার +৯১ ৯৫৯৩৭৭৩৮২৬) চাইলে ওনাকে ফোন করে গাড়ি নিতে পারেন। একটা জিনিস লক্ষ্যনীয়, গ্যান্টকে যাওয়ার জন্য (SK) সিকিমের গাড়ি নিলে খরচ কম পরে। (WB) ওয়েস্ট বেংগলের গাড়ি নিলে খরচ একটু বেশি পরতে পারে।
আমরা ঠিক সন্ধ্যা ৭.৫০ এ রাংপো চেক পোস্টে পৌছাই এবং ১ কপি করে পাসপোর্ট ভিসার কপি, একটা ছবি দিয়ে সিকিমের পারমিশন এবং পাসপোর্টে এরাইভাল সীল নিয়ে নেই।
ওয়েল কাম টু সিকিম
এরপরে দেড় ঘন্টা ড্রাইভ করে, আমাদের বুকিং করা হোটেল এ যাই। তখন রাত ৯.৪৫। সকল দোকান বন্ধ এবং ডিনার এর কোণ ব্যবস্তা নাই। আমাদের সাথে কোন ফোন ছিল না, তাই আগে ভাগে ডিনারের অর্ডার করতে পারিনি। পরে আমাদের সাথে থাকা শুকনো খাবার দিয়ে ডিনার সাড়ি। আমাদের বুকিং ডটকম থেকে বুক করা হোটেলের নাম ছিল “ডেনযং ক্ষিম হোম স্টে”। হোটেনের মান এবং পরিবেশ খুবি ভাল। রুম ভাড়া পরেছিল ১১১১ রুপি প্রতি রুম। আমরা রাতেই বলে রেখেছিলাম ব্রেক ফাস্ট এর কথা। উনারার এরেঞ্জ করে রেখেছেন।
রাতেই আমাদের সাথে ট্যুর অপারেটর মিলান এর সাথে দেখা হয়, উনি এসে প্রয়জনীয় ডকুমেন্ট নিয়ে যায় এবং ট্যুর ফী নিয়ে যায়, আমরা বড় ৫ জন ছিলাম (একজন ভিসা পাইনি তাই আসতে পারেনি) বড় গাড়ি এবং নিজেরার কাস্টম করে প্লান সাজিয়েছিলাম বাংলাদেশ থেকেই কথা বলে নিয়েছিলাম, ১ ডে ট্যুর সাংগু লেক+ ২ দিন, ১ রাত লাচুং, লাঞ্চ, ডিনার, লাচুং স্টে, ব্রেক ফাস্ট, ইয়ান্থাম ভ্যালি, জিরোপয়েন্ট, লাঞ্চ , + পরের দিন গ্যান্টক ট্যুর ১০ পয়েন্ট + টাটা সুমো তে দার্জিলিং ড্রপ, সব মিলে খরচ ৩৬০০০ রুপি। ইলেকশনের কারনে খরচ বেশি হয়েছে, গাড়ির স্বল্পতার জন্য।
১৫-০৪-২০২৪
সকাল বেলা আমাদের হোমস্টে তে আগে থেকে অর্ডার করা ব্রেক ফাস্ট আলু পরোটা, দই এবং আমের চাটনী দিয়ে ব্রেকফাস্ট করে আমরা চলে যাই সাংগু লেকের উদ্দ্যেশে, যেটা সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে ১২৪০০ ফুট উপরে অবস্থিত। এখানে আসার জন্য আগে থেকেই আমাদের পারমিশন নেয়া ছিল, এবং আমাদের মিলান জী গাড়ি নিয়ে হাজির। এবং আমাদের ট্যুর গাইড ছিলেন ববিতা। গাইড এবং ড্রাইভার ২ জনেই চমৎকার মানুষ ছিলেন। পথিমধ্যে আমরা এক্টা টী ব্রেক স্নাক্স ব্রেক নেই, সেখানে বুট এবং জ্যাকেট ভাড়া পাওয়া যায়। এখানে থেকে আমরা নুডলস এবং কফি খেয়ে নেই, এরপরে আবার রওয়ানা দেই কিছু দূর যাওয়ার পরে পাহাড়ের এক ভিউ পয়েন্ট থেকে কাংখিত কাঞ্চনঞ্জজ্ঞার দেখা পাই। এরপরে আকাবাকা রোড ধরে সারিসারি পাহাড় দেখতে দেখতে অল্পসময়ের মধ্যে সাংগু লেকে পৌছে যাই। লেকের পরে জুলুক, নাথুল্লা পাস এই রোডেই যেতে হয় কিন্তু ফরেনারদের জন্য পারমিশন নেই। সাংগু লেকের পাড় ধরে অনেকদুর পর্যন্ত হেটে কিংবা ইয়টে করে ঘুরে বেড়াতে পারবেন। কিংবা বরফের সাথে খেলা করতে পারবেন। এখানে রোপওয়েও আছে। আমাদের টীমের ৫ জনের মধ্যে ৩ জনের একটু শ্বাসকস্ট হচ্ছিল বলে আমরা বেশিক্ষন এখানে থাকি নাই। অল্প সময় থেকেই আবার ব্যাক করেছি। লেকের পানি যেমন চমৎকার ছিল, তেমনি সেদিনকার আবহাওয়াও ছিল চমৎকার। বিকাল ৩.৩০ টার দিকে আমাদের কে এমজি মার্গ এ নামিয়ে দেয়, এরপরে আমরা এখান থেকে একটা ভোডাফোন এর সিম কিনি। তারপরে আমাদের নতুন হোটেলে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে বিকাল ৫ টার দিকে মুসলিম হোটেল খুজতে বের হই, এমজি মার্গের শেষ মাথায় লাল বাজারের কাছে পেয়ে যাই “আসলাম বিরিয়ানি” কিন্তু আমরা বিফ বিরিয়ানি পাইনি শেষ হয়েগেছিল, চিকেন বিরিয়ানী দিয়ে লাঞ্চ করি। বিরিয়ানী টেস্ট এভারেজ তবে তাদের বিফ এর ঝোলএর স্বাদ ছিল অস্বাধারন।
লাঞ্চশেষ করে রুমে যাওয়ার সময় আমরা হোটেলের সামনের ফার্মাসি থেকেই পেয়ে যাই অক্সিজেন বোতল, ৬৫০ রুপি করে নিয়েছে, জিনিস হিসেবে দাম অনেক বেশি মনে হয়েছে।
১৬-০৪-২০২৪
আগে থেকেই আমাদের ২ দিন এক রাতের লাচুং, ইয়াম্থাম ভ্যালী জিরো পয়েন্ট এর প্যাকেজ বুক করাছিল। আমরা সকাল ৯ টার ভেতরে হোটেল থেকে চেক আউট করে বের হই, বড় লাগেজ গুলো এখানেই রেখে যাই। আমরা একটা ট্যাক্সি নিয়ে ২০০ রুপি ভাড়া বাজরা টাক্সি স্ট্যান্ডে গিয়েছিলাম। এখান থেকে নর্থ সিকিমের ট্যাক্সি ছাড়ে। গ্যাংটক শহরের ভিতরে চলাচলের জন্য কোন বাস নেই ট্যাক্সিতে চলাচল করতে হয় বড় টেক্সি গুলা স্ট্যান্ডে থাকে শহরের ভিতরে ঢোকা নিষেধ।
যাইহোক, আমরা সকালে নাস্তা করতে পারিনি দেখে টাক্সি স্ট্যান্ড থেকেই হালকা নাস্তা করলাম এবং কিছু শুকনো খাবার সাথে নিয়ে নিলাম, এর মধ্যে চলে আসলেন আমাদের গাইড। নাম হচ্ছে এরেন। (ফোন নাম্বার +৯১ ৬২৯৪৭৪৩৩৮৯) চমৎকার হাসিখুশি মানুষ, আসার পরে আমরা সকাল সাড়ে দশটার দিকে রওনা হলাম।
পাহাড়ি আঁকাবাঁকা রাস্তা যে কারোরই মন কাঁড়বে।তবে এত আঁকাবাঁকায় অনেকেরই মোশন সিকনেস হতে পারে সে ক্ষেত্রে মোশন সিক্নেসে জন্য আগে থেকেই ওষুধ খেয়ে নিলে ভালো হয়।
দুপুর ১২ টার দিকে আমরা এসে থামলাম একটা রেস্টুরেন্টে রোডসাইড রেস্টুরেন্ট। আমাদের প্যাকেজ এর ভিতরে যে লাঞ্চ ছিল সেটা এখানে সার্ভ করা হয় ভাত, ডিমের তরকারি আর পাহাড়ি ঢেঁকি শাক। খাবার মজা ছিল। এখানে লাঞ্চ শেষে আমরা রওনা হলাম লাচুং এর উদ্দেশ্য। পথিমধ্যে আমাদের স্বাগতম জানাল তিস্তা নদী এবং তিস্তা নদীর দুই পার ঘেঁষে কতক্ষনে এপার কতক্ষন পর করে এই গাড়ি চলে। তিস্তা নদীর ওপারে গিয়ে হঠাৎ করে আমরা দেখলাম খাড়া পাহাড়ে উঠে গেছে মিনিমাম ৩৭ টা বা তারও বেশি হবে ঝিকঝাক রোড, এবং রোডের সাইডে যদি আপনি তাকান নিশ্চিত আপনার মাথা ঘুরাবে।
কিছুক্ষন পরে আমরা এক জায়গায় একটু স্নাক্স ব্রেক দিলাম সেখানে আমরা কফি নিলাম, এবং তিস্তা নদীর উপর বাধ বানানো হচ্ছে সেটা আমরা দেখলাম। সম্ভবত গত বছর তিস্তা নদীর উপরে যে বাধ টা ছিল সেটা ভেঙে গিয়েছে এবং এলাকার অনেক ক্ষতি হয়েছে। টিগুনা ব্রিজ এলাকা।
লাচেন এখন বন্ধ পর্যটকদের জন্য কারণ অনেক পাহাড় ধস হয়েছে যার কারণে রাস্তা বন্ধ। আমরা সন্ধ্যা ছয়টায় আমাদের লাচুং এর “Thankarla Retreat” হোমস্টেতে পৌঁছায়।
হোমস্টের পরিবেশ খুবই চমৎকার, আমাদের রুম ছিল একদম টপ ফ্লোরে এবং আমরা চেক ইন করার সাথে সাথেই ওনারা আমাদেরকে দার্জিলিং চা পরিবেশন করলেন, রাতের খাবার আমরা সেখানেই সেরে নেই মুরগি আলুর দম দিয়ে। এগুলো সবই প্যাকেজের। খাবার ভালোই ছিল হোটেলের লোকজন কলকাতার এবং তারা খুবই ভালো রান্না করে। বলে নেই আপনি যেখানেই বুকিং করবেন না কেন আপনাকে অবশ্যই পাসপোর্ট, ভিসার কপি জমা দিতে হবে।
লাচুং এই আমরা রাত্রি যাপন করব, রাত্র আটটার পরে শুরু হল বৃষ্টি এবং চমতকার আবহাওয়া, তাপমাত্রা ১০ এর নীচে। অনেক ভোরে উঠতে হবে দেখে আমরা তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে যাই।
১৭/৪/২০২৪
সকাল ছয়টার ভিতরে আমাদের হোটেল থেকে ব্রেকফাস্ট দেওয়া হল চা এবং ম্যাগী নুডুলস।আমাদের গাড়ি এবং গাইড দুইজনে রেডি হয়ে গেল। আমরা সকাল ছয়টায় বের হলাম ইয়ানথাম ভ্যালী এবং জিরো পয়েন্ট এর উদ্দেশ্যে।
একটা কথা না বললেই নয় জিরো পয়েন্টে যেতে হলে আপনি আগে থেকে অবশ্যই বলে নিবেন কারণ ড্রাইভার এবং ট্যুর অপারেটররা জিরো পয়েন্ট কে ম্যাক্সিমাম সময় প্যাকেজের ভিতরে রাখেনা, প্যাকেজের ভেতরে বলে নিলে তারা আপনাকে নিবে নতুবা বাহানা করবে না যাওয়ার এবং এটার জন্য পরবর্তীতে যদি আপনি যেতে চান তাহলে আপনাকে অতিরিক্ত ৪০০০ রুপি পে করতে হবে।
অল্প সময়ের ভিতরেই আমরা ইয়ানথ্যাম্বলিতে পৌঁছাই।
ইয়ান্থাম ভ্যালিতে এই সময়ে কোন ফুল থাকে না কারণ এখন সিজন নয় । সেজন্যই আপনি যদি চিন্তা করেন এখন দেখতে যাবেন তাহলে হতাশ করবে।
ইয়ামথাম ভ্যালিতে আমরা ফ্রেশ হলাম, চা কফি খেলাম, এখান থেকে আপনি বুট এবং জ্যাকেট ভাড়া নিতে পারবেন এবং ভাড়া খুবই কম, বুটের ভাড়া হচ্ছে মাত্র ৫০ রুপি। পরের গন্তব্য ছিল জিরো পয়েন্ট। জিরো পয়েন্ট মানে হচ্ছে তিব্বত সিকিমের বর্ডার এর কাছাকাছি। যেহেতু এটা বর্ডার এলাকা খুবই রেস্ট্রিক্টেড, তাই জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত যেতে দিবে না। কিন্তু 0 পয়েন্টের কাছাকাছি যেখানেই যাবেন সেখানে বরফের রাজ্য আপনাকে স্বাগতম জানাবে। চারিদিকে উঁচু উচু পাহাড় এবং পাহাড়ের চূড়ায় শুধু বরফ আর বরফ। আপনি এখানে ইচ্ছামত বরফ নিয়ে খেলবেন। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এখানকার উচ্চতা ১৫৩০০ ফিট। অনেকেই এ পর্যন্ত আসতে পারেন না কারণ শ্বাসকষ্ট হয় সে ক্ষেত্রে কর্পূরের ঘ্রাণ এবং ছোট ছোট বোতলের অক্সিজেন যদি নিয়ে আসেন অনেকটা হেল্প হতে পারে। আমাদের তিস্তা নদীর উৎপত্তিস্থল এই জিরো পয়েন্টের কাছাকাছি চোলামু লেক থেকে, যদিও সেখানে যাওয়ার কোন পারমিশন নাই। আরো সুন্দর সুন্দর কিছু লেক আছে যেমন গুরুদম্বার লেক, আপনি ভারতীয় হলে অবশ্যই যেতে পারবেন কিন্তু ফরেনারদের যাওয়ার পারমিশন নেই।
আমরা এখানে বেশ কিছু সময় কাটিয়ে আবার ফিরে আসলাম ইয়ানথাম ভেলি এবং সেখান থেকে আবার সেই আমাদের লাচুং এর হোটেলে দুপুর ১২ টার ভিতরে চলে আসলাম, সেখানে আমাদের লাঞ্চ ।
প্যাকেজের ভিতরের লাঞ্চ ভাত আলুর দম ডিম-তরকারি ডাল।
লাঞ্চ শেষ করে আমরা দুপুর ১ টায় গাড়ি স্টার্ট দিলাম, উদ্দেশ্য গ্যাংটক। আবার সেই পাহাড়ি আঁকাবাঁকা রাস্তা ভাঙাচোরা রাস্তা পেরিয়ে গ্যান্টকে পৌঁছালাম সন্ধ্যা ৬.৩০টায়.
বাজরা ট্যাক্সি স্ট্যাণ্ড থেকে একটা ট্যাক্সি নিয়ে আমরা চলে আসলাম আমাদের হোটেল মাউন্ট ইন। এমজি মার্গের সাথেই।সিকিমে এটা আমাদের চতুর্থ হোটেল। প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট দিয়ে চেক ইন করে নিলাম। রুম ভাড়া ১৫০০ রুপি, গিজার আছে, হোটেলের রুম পরিবেশ ভাল তবে স্টাফ দের ব্যবহার পুরোপুরি পেশাগত না। এখানেই আমরা ডিনার সেরে নিলাম।
১৮/৪/২০২৪
আজকে আমাদের সিকিমের শেষ দিন।
আজকে আমাদের প্লান হচ্ছে সিকিমের রাজধানী গ্যাংটক শহর দেখে আমরা দুপুরের দিকে দার্জিলিং এর উদ্দেশ্যে রওনা হব।
আমাদের ট্যুর অপারেটর মিলানজি সকাল ৯ টার ভিতরে গাড়ি পাঠিয়ে দিলেন। আমরা হোটেল থেকেই ব্রেকফাস্ট শেষ করে বেরিয়ে পড়লাম গ্যাংটক শহর দেখার জন্য।
প্রথমে আমরা গেলাম ফ্লাওয়ার এক্সিবিশন সেন্টার। এখানে হরেক রকম ফুলের বাগান রয়েছে, এখানে আপনার মন ভাল হতে বাধ্য। একটা বিষয় বলতে ভুলে গেছি আমাদের হোটেলের পাশেই ছিল রোপওয়ে কিন্তু আমরা রোপ ওয়েতে যাইনি। এরপরে এক এক করে আমরা কয়েকটি ওয়াটার ফলস দেখলাম। তারপরে গেলাম তাসি ভিউ পয়েন্ট। এখান থেকে আবহাওয়া পরিষ্কার থাকলে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যায়। আমাদের দিন মেঘলা আবহাওয়া ছিল।।
তারপরে আমরা গেলাম একটা ভিউ পয়েন্ট যেখান থেকে পুরা গ্যান্টক দেখা যায়। সবশেষে আমরা গেলাম ইঞ্চি মনস্ট্রি। এটাই হচ্ছে গ্যাংটকের সবচেয়ে প্রাচীনতম মনস্ট্রি। মনস্ট্রী দেখতে দেখতে আবার বৃষ্টি চলে এলো। তাই আমরা দ্রুত হোটেলে ফিরে এলাম।
হোটেলে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে চেক আউট করে আমরা বেরিয়ে পড়লাম দার্জিলিং এর উদ্দেশ্যে। হোটেল থেকে আমরা একটা টেক্সি করে নিলাম ২০০ রুপি দিয়ে এতে আমরা চলে গেলাম দার্জিলিং ট্যাক্সি স্ট্যান্ড বা দার্জিলিং বাস স্ট্যান্ড। এখান থেকে দার্জিলিং বা শিলিগুড়ির বাস ছাড়ে। আমাদের জন্য মীলান জীর আগে থেকেই বুক করা ট্যাক্সি ছিল ৭ সীটের টাটা সুমো গোল্ড।দুপুর আড়াইটার দিকে আমরা ট্যাক্সিতে করে দার্জিলিং এর উদ্দেশ্যে রওনা হই, পথিমধ্যে রাংপো চেকপোস্ট পড়বে এবং সেখানে আমরা পাসপোর্ট গুলোতে এক্সিট সিল মেরে নিয়ে যাব। এই বিষয়টা আপনাকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে সিকিম ছেড়ে যাবার সময় অবশ্যই যেন পাসপোর্টে এক্সিট সীল থাকে।
আর এভাবেই আমাদের ৫ দিন ৪রাতের সিকিম ভ্রমণ শেষ হলো।
🥰🥰🥰🥰